ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে কত টাকা আয় করা যায় |
বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিশেষ করে তরুণদের মাঝে। এছাড়াও ঘরে বসে ইনকাম করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুবিধা ও অধিক পরিমাণে আয় করার উদ্দেশ্যে ফ্রিল্যান্সিং এর মধ্যে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তবে যারা নতুন ফ্রিল্যান্সিং এ যুক্ত হতে চায় তাদের একটি কমন প্রশ্ন থাকে, ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে কত টাকা আয় করা যায় বা একজন ফ্রিল্যান্সারের মাসে কত টাকা আয় করে।
মূলত এই প্রশ্নটা সবার জানা প্রয়োজন বিশেষ করে যারা ফ্রিল্যান্সিং এ যুক্ত হতে চাচ্ছেন। সহজ ভাবে বলতে গেলে ফ্রিল্যান্সিং থেকে ইনকাম করা অনেক কঠিন একটি বিষয় যদি আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণ স্কিল এবং অভিজ্ঞতা না থাকে।
একজন ফ্রিল্যান্সার মাসে কত টাকা আয় করে তা বিভিন্ন বিষয়ের উপর ডিপেন্ড করে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ফ্রিল্যান্সিং করে একজন ফ্রিল্যান্সার মাসে কত টাকা আয় করে তার একটি আনুমানিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব।
এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং থেকে বেশি পরিমাণে আয় করার জন্য কি কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয় করার কিছু টিপস এবং ফ্রিল্যান্সিং এর মূল সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো কি কি এই বিষয়টাকে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করব।
আপনারা যারা ফ্রিল্যান্সিং করতে চাচ্ছেন কিংবা ফ্রিল্যান্সিং করতে ইচ্ছুক তারা অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ার চেষ্টা করবেন।
এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড আমরা বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল ইতিমধ্যে আমাদের ব্লগে করেছি আপনি চাইলে সেগুলো পড়ে নিতে পারেন।
তাহলে চলুন বকবক বাদ দিয়ে মূল আলোচনায় ফিরে আসি।
ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে আনুমানিককত টাকা আয় করা যায়?
বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং একটি বিশাল সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত করা হচ্ছে। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিং স্বাধীনভাবে কাজ করার এবং অতিরিক্ত ইনকাম করার একটি ইউনিক উপায় হয়ে উঠেছে। তবে ফ্রিল্যান্সিং থেকে কত পরিমাণে আয় করা যায় তা ডিপেন্ড করে অনেকগুলো বিষয়ের উপর। যেমন;
প্রথমত, একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার প্রতিমাসে কত টাকা আয় করতে পারে তা নির্ভর করে তার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং কাজের কোয়ালিটির উপর। যেমন একজন প্রোগ্রামার যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্টে ভালোভাবে এক্সপার্ট হয়ে থাকে, তাহলে তিনি মাসে ২০,০০০ থেকে ২,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকে আবার কখনো কখনো এর থেকেও কমও আয় করে থাকে। অন্যদিকে, একজন প্রফেশনাল গ্রাফিক ডিজাইনার মাসিক ২০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকার মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আয় করে থাকেন। এছাড়াও যারা ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে যুক্ত রয়েছে তারা এক মাসে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকে, কখনো কখনো এর অধিক পরিমাণে আয় করে থাকেন।
দ্বিতীয়ত, কাজের পরিমাণ ও চাহিদাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি কোন ফ্রিল্যান্সার ফুল টাইম হিসাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ে নিযুক্ত থাকেন এবং একাধিক প্রকল্পে কাজ করেন, তাহলে সেই ফ্রিল্যান্সারের আয়ের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই অবশ্যই অনেক বেশি হবে। আর কেউ যদি পার্ট টাইম হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং করে এবং খুব একটা চাহিদা প্রকাশ না করে তাহলে ফ্রিল্যান্সিং থেকে ভালো পরিমাণ আয় করার সম্ভবনা খুবই কম। উদাহরণস্বরূপ, একজন কন্টেন্ট রাইটার যদি মাসে ১৫-২০টি প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে তিনি মাসে ৪০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে সক্ষম হবেন। আর কেউ যদি মাসে এক থেকে দুইটা প্রজেক্টে কাজ করে তাহলে তার ইনকামের পরিমাণ খুবই কম হবে আনুমানিক ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার কাছাকাছি।
তৃতীয়ত, ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মের নির্বাচনও একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলো হল ফাইভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডটকম ইত্যাদি। প্রত্যেকটি প্ল্যাটফর্মের কিছু নিজস্ব নিয়ম কানুন এবং গাইডলাইন রয়েছে যা ফ্রিল্যান্সারদের আয়কে প্রভাবিত করে। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কম্পিটিশন অনেক বড় একটি প্রভাব রাখে ইনকাম করার ওপর। এছাড়াও যারা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এর বাইরে কাজ করে তাদের বাড়তি ইনকামের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সর্বশেষ, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস থেকে ভালো পরিমাণে আয় করার জন্য অবশ্যই প্রতিনিয়ত নিজের স্কিল ও ক্রিয়েটিভিটিকে বৃদ্ধি করতে হবে এবং নিজেকে আপডেট রাখতে হবে। আপনার স্কিল যত পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে এবং experience যত বৃদ্ধি পাবে আপনার ইনকাম করা সম্ভবনা তত বৃদ্ধি পাবে। বেশিরভাগ সময় নতুন স্কিল অর্জন এবং পুরানো স্কিল গুলোকে আপগ্রেড করার মাধ্যমে যেকোনো ফ্রিল্যান্সার তার ইনকামের সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়াও এক্সপেরিয়েন্স ফ্রিল্যান্সাররা তার জন্য নতুন ফ্রিল্যান্সার এর তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে আয় করে থাকে।
তবে আনুমানিকভাবে একজন মধ্যমানের ফ্রিল্যান্সার মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করে থাকে।
কিন্তু কাজের ধরন, কাজের কোয়ালিটি এবং বিভিন্ন কারণে ইনকামের অনেক কম বেশি হতে পারে। যা আমরা উপরে আলোচনা করলাম। তবে একজন এক্সপার্ট লেভেল এর ফ্রিল্যান্সার মাসে ৫০০০০ টাকার উপরে আয় করে থাকে।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো;
আমরা স্বাভাবিকভাবে মনে করি যে একজন ফ্রিল্যান্সার মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে। যা মূলত সম্পূর্ণ সত্য নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফেইক প্রমোশন এবং কোর্স বিক্রির উদ্দেশ্যে এই ধরনের কথাবার্তা বলা হয়ে থাকে।
তবে সবাই যে এরকম করে তা কিন্তু নয় অনেক এক্সপার্ট রয়েছে যারা মাসে লাখ লাখ টাকার উপরে অধিক আয় করে।
বিশেষ করে যারা অনেক এক্সপেরিয়েন্স এবং অনেকবছর যাবত ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে রয়েছে তারা মাসে ৫০ লাখ টাকার অধিক আয় করে থাকে।
তবে বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সারে যারা নতুন অবস্থায় থাকে তাদের ইনকামের পরিসর খুবই কম।
একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে মাসিক কত টাকা আয় করা যায়?
একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে মাসিক আয়ের পরিমাণ কিছুটা কম হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ নতুনদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা তখনও সম্পূর্ণরূপে গঠিত হয়না এবং তারা এখনও মার্কেটপ্লেস নিজেদের স্থান করতে শিখেনি কিংবা শিখতেছে।
তবে নতুন ফ্রিল্যান্সাররা তাদের পারফরম্যান্স, চেষ্টা এবং সঠিক পদ্ধতি ফলো করে অনেক ভালো পরিমাণে আয় করছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার পারিশ্রমিক হিসাবে মাসে অনির্দিষ্ট পরিমাণের আয় করতে পারে।
এছাড়াও কাজের ধরন, কাজের পরিমাণ, কোন স্থানে কাজ করতেছে, কাজের কোয়ালিটি কেমন এই বিষয়গুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে নতুন ফ্রিল্যান্সারের ইনকামের উপর।
তবে আনুমানিকভাবে নতুন ফ্রিল্যান্সাররা যেরকম আর করতে পারে;
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট/প্রোগ্রামিং: 15,000 – 30,000 টাকা
- গ্রাফিক্স ডিজাইন: 10,000 – 25,000 টাকা
- কনটেন্ট রাইটিং/এডিটিং: 10,000 হয় 20,000 টাকা
- ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট: 8,000 – 15,000 টাকা
তবে গড়ে দেখা যায় যে, একজন ফ্রিল্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় 10 হাজার থেকে 50 হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, কিন্তু এর অনেক ব্যতিক্রম রয়েছে।
তবে একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে দৈনিক 5 থেকে 6 ঘন্টা নিয়মিত কাজ করা উচিত সে ক্ষেত্রেই এই পরিমাণে আয় করা সম্ভব।
তবে আপনি যত বেশি সময় ব্যয় করবেন তত আয় করা সম্ভবনা বৃদ্ধি পাবে। যদি সময় বেশি দেওয়া যায়, তাহলে আয় বেশি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক।
একইভাবে, যদি দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে নতুন ফ্রিল্যান্সারের আয়ের পরিমাণও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিয়মিত কাজ করা, কোয়ালিটি সম্পূর্ণ কাজ করা এবং ক্লায়েন্টদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা।
আর এই বিষয়গুলো ভালোভাবে মেনে চললে একজন নতুন ফ্রিল্যান্সারও খুব তাড়াতাড়ি তার আয় অধিক পারি মানে বৃদ্ধি করতে পারবে।
একজন ফ্রিল্যান্সার মাসে কত টাকা আয় করেন বা ফ্রিল্যান্সারদের মাসিক আয়
একজন ফ্রিল্যান্সার মাসে কত টাকা আয় করেন |
আমি এর আগের সেকশনেই বলেছি একজন ফ্রিল্যান্সার কত টাকা আয় করে তা নির্দিষ্ট ভাবে বলা সম্ভব নয় তবে আমরা একটি আনুমানিক ধারণা পেতে পারি। নিচের ছকের মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি স্কিলের ফ্রিল্যান্সারদের মাসিক আয় এর একটি সম্ভাব্য ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি।
ফ্রিল্যান্সিং স্কিল | সম্ভাব্য মাসিক আয় (বাংলাদেশী টাকা) |
---|---|
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট | 20,000 – 2,50,000+ |
মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট | 30,000 – 2,00,000+ |
গ্রাফিক্স ডিজাইন | 15,000 – 1,50,000+ |
ডিজিটাল মার্কেটিং | 25,000 – 1,50,000+ |
কনটেন্ট রাইটিং/এডিটিং | 15,000 – 80,000+ |
ভিডিও এডিটিং/প্রোডাকশন | 20,000 – 1,00,000+ |
বিজনেস কনসালটিং | 30,000 – 2,00,000+ |
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট | 15,000 – 80,000+ |
ডাটা এনালাইসিস | 25,000 – 1,50,000+ |
অনলাইন শিক্ষকতা/কোচিং | 20,000 – 1,00,000+ |
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন | 25,000 – 1,20,000+ |
সামাজিক মিডিয়া অ্যাডভার্টাইজিং | 20,000 – 1,00,000+ |
ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্ট | 40,000 – 2,50,000+ |
ইলাস্ট্রেশন/আর্ট | 20,000 – 1,20,000+ |
ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (UX) ডিজাইন | 30,000 – 1,50,000+ |
ম্যাশিন লার্নিং/এআই | 40,000 – 2,00,000+ |
ক্লাউড কম্পিউটিং | 30,000 – 1,80,000+ |
ডাটাবেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন | 25,000 – 1,50,000+ |
ওয়ার্ডপ্রেস স্পেশালিস্ট | 30,000 – 1,80,000+ |
ই-কমার্স ম্যানেজমেন্ট | 25,000 – 1,50,000+ |
আইটি সাইবার সিকিউরিটি | 25,000 – 2,00,000+ |
ফ্রিল্যান্সিং করে আয় বাড়ানোর উপায় কি?
ফ্রিল্যান্সিং করে আয় বাড়ানোর কোন সরাসরি উপায় নেই, তবে কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো ফলো করে ইনকাম বাড়ানো সম্ভব। তবে এগুলো অবশ্যই লং টার্ম বেনিফিট পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। ফ্রিল্যান্সিং করে আয় বাড়ানোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় নিম্নরূপ:
১. স্কিল বৃদ্ধি করা: ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নিজের ইনকাম বাড়ানোর জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে আপনার স্কিলকে শান দিতে হবে অর্থাৎ উন্নত করতে হবে। আপনার স্কিল যত বেশি উন্নত হবে, আপনি তত বেশি আয় করতে পারবেন। বর্তমান এই ডিজিটাল যুগের সব সময় নতুন প্রযুক্তি, টুলস এবং টেকনিক নিয়ে রিসার্চ করার চেষ্টা করবেন। সব সময় প্র্যাকটিস করুন এবং নতুন নতুন স্কিল তৈরির দিকে মনোযোগ রাখুন।
২. কোয়ালিটি ফুল কাজ করা: আপনার ক্লাইন্টকে সবসময় আপনার ১০০ পার্সেন্ট দেয়ার চেষ্টা করবেন। আপনার সর্বোচ্চ নলেজ এবং পরিশ্রম দেয়ার চেষ্টা করবেন আপনার ক্লায়েন্টের কাজের জন্য। আর আপনি যখন কোয়ালিটি সম্পূর্ণ কাজে আপনার ক্লায়েন্ট কে জমা দিবেন। যদি আপনার কাজের কোয়ালিটি ভালো হয় তাহলে পুনরায় সেই ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজে নিযুক্ত করার সম্ভাবনা থাকবে।
৩. গ্রহণযোগ্য প্রাইসিং রাখা: আপনার স্কিলের উপর ভিত্তি করে এবং আপনার কাজের কোয়ালিটির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ প্রাইস নির্ধারণ করার চেষ্টা করবেন। আপনি যদি বিগিনার হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে প্রাইসিং কম রাখার চেষ্টা করবেন। এতে করে ক্লাইন্টকে সহজেই আকৃষ্ট করতে পারবেন। আর প্রাথমিকভাবে যদি আপনি অধিক পরিমাণে প্রাইসিং রেখে দেন সে ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টকে আকৃষ্ট করা কঠিন হতে পারে। তবে আপনি যখন দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করবেন তখন আপনি চাইলে আপনার প্রাইসিং বৃদ্ধি করতে পারবেন।
৪. উপযুক্ত প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করা: ফ্রিল্যান্সিং করে ভালো পরিমাণে আয় করার জন্য অবশ্যই আপনাকে উপযুক্ত প্রজেক্ট নির্ধারণ করতে হবে। একজন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে আপনি সবগুলো প্রজেক্টে কাজ করার চেষ্টা করবেন না। আপনার জন্য সবথেকে উপযুক্ত যেই প্রজেক্ট সেই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনি অল্প সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন এবং কাজের কোয়ালিটি ঠিক রাখতে পারবেন। আর যেই প্রজেক্ট গুলোর প্রাইস খুবই কম সেই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ না করাই উত্তম।
৫. পোর্টফোলিও তৈরি করা: আপনি যে কাজ পারেন তা প্রমাণ করার জন্য অবশ্যই একটি পারফেক্ট পোর্টফোলিও তৈরি করা উচিত। আপনার উল্লেখযোগ্য প্রজেক্টের ইনফরমেশন গুলো এখানে যুক্ত করে দিতে পারেন, আপনার ক্লাইন্টকে এনগেজ করার জন্য। আপনি যদি সঠিকভাবে পোর্টফোলিও এবং আপনার ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এর প্রোফাইল গুলো সাজাতে পারেন তাহলে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি বৃদ্ধি পায়।
৬. নিজেকে প্রমোট করা: আপনি যে বিষয়ের উপর দক্ষ আপনি সেই রিলেটেড বিভিন্ন কাজের জন্য নিজেকে প্রমোট করতে পারেন। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কিংবা সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে প্রমোট করতে পারেন নিজেকে। এছাড়াও সমস্ত ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে নিজেকে প্রমোট করার অপশন থাকে। প্রাথমিকভাবে আপনি সেগুলো সাহায্য নিতে পারেন নিজেকে সবার সামনে উপস্থাপন করার জন্য এবং অধিক পরিমাণে কাস্টমার পাওয়ার জন্য। এছাড়াও facebook এরমধ্যে বিজনেস পেজ তৈরি করে অ্যাড চালাতে পারেন নিজেকে প্রমোট করার জন্য।
এছাড়াও কমিউনিকেশন স্কিল, ব্র্যান্ডিং, নেটওয়ার্কিং এর মতো বিষয়গুলোকে কাজে লাগিয়ে আপনি নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন। আর এইসব পদ্ধতি অবলম্বন করে ফ্রিল্যান্সিংয়ে নিজের অবস্থান মজবুত করতে পারবেন।
এছাড়াও উল্লেখিত বিষয়গুলো আপনার নতুন নতুন ক্লায়েন্ট পেতে অনেক সাহায্য করবে। তবে মাথায় রাখবেন, ফ্রিল্যান্সিং করে আয় বাড়ানোর কোন সুনির্দিষ্ট উপায় নেই। তবে আপনি উপরের পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করে চেষ্টা করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা লাগে?
আচ্ছা, ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পূর্বে অনেক জনই জানতে চাই যে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা লাগে? ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা লাগবে তা আপনার উপর নির্ভর করবে। আপনি চাইলে সম্পূর্ণ ফ্রিতে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারেন আবার আপনি চাইলে লাখ টাকা দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারবেন না। এখানে আপনার ইচ্ছা, প্রাধান্যতা এবং কাজ শেখার প্রক্রিয়ার উপর ডিপেন্ড করবে। তবে আপনি যদি সম্পূর্ণ নতুন হয়ে থাকেন তাহলে কিছু খরচ করতে হতে পারে।
১. কোর্স খরচ: আপনি যদি স্কিল ডেভেলপ করার জন্য কোন কোর্স করেন সেক্ষেত্রে আপনাকে কোর্সের টাকা ব্যয় করতে হবে। এটা অধিকাংশ সময় আনুমানিক ২৫০০ থেকে ১০০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। তবে কখনো কখনো এটি ২০ হাজারের কাছাকাছি বা ২৫০০০ কাছাকাছি চলে আসে। তবে আপনি কি বিষয়ের উপর স্কিল ডেভেলপ করতেছেন সেটার উপর ভিত্তি করে কোর্সের খরচ ডিপেন্ড করবে।
২. বিভিন্ন সফটওয়্যার এবং টুলস ক্রয়: আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর যেই সেক্টরেই থাকুন না কেন আপনাকে কাজের সুবিধার্থে বিভিন্ন ধরনের টুলস ক্রয় করতে হবে। তবে আপনি যদি রিসার্চ করতে পছন্দ করেন তাহলে আপনি ফ্রিতেও কাজ করতে পারবেন পেইড টুলসের প্রয়োজন হবেনা। তবে আপনার কাজকে সহজ করার জন্য অবশ্যই টুলস ব্যবহার করা উচিত। আর এখানেও আনুমানিক অনেক টাকা খরচ করতে হয়।
৩. ইন্টারনেট কানেকশন: মূলত ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়া অনলাইন দুনিয়াতে টিকে থাকা যায় না সেটা সবাই জানে। তবে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কাজ করতে এলে কিছু বিশেষ সেক্টর রয়েছে যেগুলোতে অনেক বেশি পরিমাণে ইন্টারনেট কানেকশন লাগে। এজন্য তখন ইন্টারনেট কানেকশনের প্যাকেজ আপডেট করতে হয় অথবা অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হয়।
৪. পিসি কিংবা ল্যাপটপ: ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে অবশ্যই আপনাকে ভালো মানের ফ্রিল্যান্সিং পিসি কিংবা ল্যাপটপ রাখতে হবে। তাহলে আপনি কাজ করার সময় অসুবিধা ফিল করবেন। তবে আপনার যদি আলাদা কোন ল্যাপটপ কিংবা পিসি থাকে তাহলে সেগুলোকে আপনি আপগ্রেড করতে পারেন। এক্ষেত্রে হয়তো আপনাকে কিছু আপডেট হার্ডওয়ার যুক্ত করতে হতে পারে।
তবে এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে পিসি এবং ইন্টারনেট কানেকশন কিন্তু আমাদের প্রতিনিয়তই লাগে। ফ্রিল্যান্সিং না করলেও এই দুইটা জিনিস আমাদেরকে আধুনিক দুনিয়ায় টিকে থাকতে অনেক সাহায্য করে।
আর ফ্রিল্যান্সিং কোর্স কিংবা টুলস এগুলো ছাড়াও আপনি ফ্রিল্যান্সিং ভালো করেই করতে পারবেন যদি আপনি একটু রিসার্চ এবং কাজ করার দিকে বেশি মনোযোগী হন।
তবে আপনি যদি সম্পূর্ণ নতুন হয়ে থাকেন তাহলে আপনার আনুমানিক ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মত খরচ হতে পারে, তবে এটা আপনার উপর ডিপেন্ড করবে।
তবে আমি সম্পূর্ণ ফ্রিতেই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কাজ শুরু করেছিলাম আর আলহামদুলিল্লাহ আজ আমি অনেকটাই সফল।
ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কত টাকা আয় করা যায়?
ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে আয়ের পরিমাণ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করবে। যেমন – স্কিল, এক্সপেরিয়েন্স, কাজের ধরণ, মার্কেট ডিমান্ড ইত্যাদি বিষয় সমূহ। তবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডেভেলপারের আনুমানিক আয় কিছুটা নিচের মত হয়ে থাকে।
প্রাইমারি লেভেল (নবীন/অনভিজ্ঞ):
- ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপার: 20,000 – 40,000 টাকা/মাসে
- ব্যাকএন্ড ডেভেলপার: 30,000 – 50,000 টাকা/মাসে
স্ট্যান্ডার্ড লেভেল (2-4 বছরের অভিজ্ঞতা):
- ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপার: 40,000 – 80,000 টাকা/মাসে
- ব্যাকএন্ড ডেভেলপার: 50,000 – 1,00,000 টাকা/মাসে
- ফুলস্ট্যাক ডেভেলপার: 60,000 – 1,20,000 টাকা/মাসে
হাই লেভেল (5+ বছরের অভিজ্ঞতা):
- ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপার: 80,000 – 1,50,000 টাকা/মাসে
- ব্যাকএন্ড ডেভেলপার: 1,00,000 – 2,00,000 টাকা/মাসে
- ফুলস্ট্যাক ডেভেলপার: 1,20,000 – 2,50,000 টাকা/মাসে
এগুলো ছাড়াও আরো বিশেষ কয়েকটি দক্ষতা রয়েছে যেগুলোতে আরো বেশি আয় করা সম্ভব। যেমন – ব্লকচেইন ডেভেলপার, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার, সফটওয়্যার আর্কিটেক্ট ইত্যাদি।
তবে এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো – নিয়মিত দক্ষতা বৃদ্ধি, মানসম্মত কাজ করা, নেটওয়ার্কিং এবং মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে সব সময় আপগ্রেড করা।
যদি এগুলো ভালোভাবে মেনে চলা যায়, তাহলে একজন দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার অনেক ভালো পরিমাণে আয় করতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিং থেকে।
ফ্রিল্যান্সিং করে যে কাজে বেশি টাকা আয় করতে পারবেন?
ফ্রিল্যান্সিং এর সমস্ত সেক্টর থেকেই ভালো পরিমাণে আয় করা সম্ভব। তবে কিছু বিশেষ স্কিল এবং সেক্টর রয়েছে যেগুলোতে অনেক বেশি পরিমাণে আয় করা সম্ভব এবং ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে এগুলোর ডিমান্ড অনেক বেশি। ফ্রিল্যান্সিং করে বেশি আয় করার জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলোকে বিবেচনা করা যেতে পারে:
১. প্রোগ্রামিং এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট: উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন প্রোগ্রামাররা, ওয়েব ডেভেলপাররা, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপাররা এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা খুব ভালো আয় করে থাকেন ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর গুলোতে। তবে নতুন এবং জটিল টেকনোলজিগুলোর ওপর কাজ করলে আয় আরও বেশি হতে পারে।
২. ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি: ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি নির্মাণে স্পেশালিস্টরা খুব ভালো পরিমাণে আয় করে থাকেন। এই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, হয়তো ফিউচারে আরো বেশি পরিমাণে আয় করার সম্ভবনা থাকবে।
৩. মেশিন লার্নিং এবং এআই: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স/কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং এবং ডিপ লার্নিং এগুলো অনেক জটিল প্রযুক্তি। এই সেক্টরগুলো থেকে এখন প্রচুর পরিমাণে আয় করা সম্ভব। বর্তমানে এক ধরনের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রেভিলিউশন চলতেছে। যার ফলে এই সেক্টরে অনেক বেশি পরিমাণে আয় করা সম্ভব।
৪. ডিজাইন: গ্রাফিক্স ডিজাইন, UI/UX ডিজাইন, ভেক্টর আর্ট, অ্যানিমেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রের হাই স্কিলসম্পন্ন ডিজাইনাররা অনেক বেশি আয় করে থাকেন।
৫. ডিজিটাল মার্কেটিং: সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট (SMM), সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO), ইমেইল মার্কেটিং, পেইড এডভার্টাইজিং ইত্যাদি সেক্টরের কর্মীরা তুলনামূলক অনেক বেশি পরিমাণে আয় করে থাকেন। আর বর্তমানে এই কাজগুলোর চাহিদা অনেক বেশি।
৬. ভিডিও এডিটিং ও মোশন গ্রাফিক্স: ভিডিও এডিটিং, মোশন গ্রাফিক্স, ভিজুয়াল ইফেক্টস এবং অ্যানিমেশনের এক্সপার্টরাও অনেক বেশি পরিমাণে আয় করে যাচ্ছেন এই সেক্টর থেকে।
৭. কন্টেন্ট রাইটিং এবং এডিটিং: ওয়েবসাইট, ব্লগ, ই-বুক এবং অন্যান্য ডিজিটাল কনটেন্ট রাইটিং ও এডিটিংয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ভালো ইনকাম করা যায়।
এছাড়াও অবশ্যই সমস্ত সেক্টর থেকে ভালো পরিমানে আয় করা সম্ভব তবে এর জন্য প্রয়োজন স্কিল এবং এক্সপেরিয়েন্স। আর একটি মার্কেটে আপনি যত বেশি সময় ধরে থাকবেন আপনার ইনকাম করার সম্ভাবনা ততো বেশি থাকবে।
তবে অনেক সেক্টর রয়েছে যেমন ডাটা এন্ট্রি এবং বুককিপিং যেগুলোতে ইনকাম করার পসিবিলিটি বর্তমানে খুব কম।
এজন্য সঠিক সেক্টর নির্বাচন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ freelancing কাজ করার জন্য। আপনি উপরে যে কোন একটি সেক্টর নিয়ে কাজ করতে পারেন তাহলে আপনি অনেক বেশি পরিমাণে আয় করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা কিভাবে তুলতে হয়?
আপনার কষ্ট করে ফ্রিল্যান্সিং থেকে উপার্জিত অর্থ আপনি কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনার কাছে নিয়ে আসতে পারবেন। তবে বাংলাদেশের এখনো অনেক সমস্যা রয়েছে টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে। নিচে কিছু জনপ্রিয় পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:
১. অনলাইন মানি ট্রান্সফার সার্ভিস: Skrill, Payoneer এর মতো অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে টাকা তুলতে পারেন। তবে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সার পেওনিয়ার ব্যবহার করে তাদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের টাকা উত্তোলন করে। অনলাইন মানি ট্রান্সফারিং সার্ভিস ব্যবহার করার মাধ্যমে টাকা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসতে পারবেন। তবে সব থেকে জনপ্রিয় মানি ট্রান্সফারিং সার্ভিস PayPal বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায় না অর্থাৎ বাংলাদেশে এখনো পেপাল উন্মুক্ত হয়নি। যার কারণে একটু অসুবিধা হয় ইন্টারন্যাশনাল ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে টাকা রিসিভ করার সময়।
২. ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট: বর্তমানে অনেক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেগুলো থেকে আপনি সরাসরি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পেমেন্ট রিসিভ করতে পারবেন। আপনার কাজের বিনিময়ে যদি আপনার ক্লায়েন্ট আপনাকে বিটকয়েন বা অন্য কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সি পেমেন্ট করে, সেক্ষেত্রে আপনি আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট থেকে পেমেন্ট রিসিভ করে টাকা তুলতে পারবেন।
৩. মানি ট্রান্সফার কম্পানি: Western Union, MoneyGram, xoom এর মতো মানি ট্রান্সফার কম্পানিগুলো থেকেও টাকা তুলতে পারবেন। বর্তমানে এই সার্ভিসগুলো থেকে টাকা উত্তোলন করা তুলনামূলক সহজ।
মূলত এই তিনটি পদ্ধতি অবলম্বন করে ফ্রিল্যান্সারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের ফ্রিল্যান্সিংকে উপার্জিত অর্থ রিসিভ করে। তবে এর পাশাপাশি আরও অনেকগুলো উপায় রয়েছে যেগুলো আমরা পরবর্তীতে কোন এক আর্টিকেলে আলোচনা করব।
ফ্রিল্যান্সিং জনপ্রিয় হওয়ার মূল কারণ
নিশ্চিতভাবে, ফ্রিল্যান্সিং এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম জনপ্রিয় কর্মক্ষেত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কর্মজীবনে আমূল পরিবর্তন এনেছে এবং অনেক মানুষের কাছে একটি আকর্ষণীয় ইনকামের অপশন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে ফ্রিল্যান্সিং জনপ্রিয় হওয়ার পিছনে কিছু কারণ রয়েছে যা অবশ্যই জানা প্রয়োজন।
প্রথমত, ফ্রিল্যান্সিং স্বাধীনতা ভাবে এবং নিজের মন মতো করে কাজ করার সুযোগ প্রদান করে। আপনি নিজের সময় নিজেই নির্ধারণ করতে পারবেন এবং কোন প্রতিষ্ঠানে বা অফিসে বাধ্য থাকবেন না। আপনি যে বিষয়ে কাজ করতে চান আপনি সেই বিষয়ে কাজ করতে পারবেন। আপনাকে কারো আন্ডারে কাজ করতে হবে না। আপনি যেখানে থেকে খুশি সেখান থেকে কাজ করতে পারবেন।
দ্বিতীয়ত, ফ্রিল্যান্সিং আপনাকে বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্টে এবং ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করার সুযোগ দেয়। এতে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন কিছু শিখার সুযোগও পাওয়া যায়। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং করার সময় আপনি বিভিন্ন সংস্কৃতি ও মানুষের সাথে কাজ করবেন যা আপনার বর্তমান বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করবে।
তৃতীয়ত, ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমে অধিক পরিমাণে আয় করা সম্ভবনা রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং এ যদি আপনি কোন একটি কাজের উপর ভাল দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার ইনকাম অনেক বেশি হবে। পাশাপাশি, নিজের সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারায় একাধিক প্রকল্পে কাজ করা সম্ভব হয়ে যায়। এছাড়াও অনেক সময় ক্লায়েন্ট আপনার দামেরও বেশি প্রদান করতে রাজী হবেন যদি আপনি কোয়ালিটি সম্পূর্ণ কাজ করতে পারেন। অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের কাজের কোয়ালিটি যত ভালো হবে ইনকাম করার পসিবিলিটিও তত বৃদ্ধি পাবে।
অপরদিকে, ফ্রিল্যান্সিং এর সব থেকে বড় অসুবিধা হলো আয়ের অনিশ্চয়তা। আপনি এক মাসে অনেক বেশি পরিমাণে আয় করতে পারলেও পরবর্তী মাসে যে আপনার ভালো ইনকাম হবে তার গ্যারান্টি আপনি দিতে পারবেন না। এছাড়াও ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া, একাকীত্ব এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো চ্যালেঞ্জগুলো আপনার সামনে অপেক্ষা করবে। ফ্রিল্যান্সিং যতটা সহজ মনে করা হয় অবশ্য ততটাও সহজ নয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
বাংলাদেশে একজন ফ্রিল্যান্সারের গড় মাসিক আয় কত?
একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার শুরুতে মাসিক আয় ১৫,০০০ – ৩০,০০০ টাকা এর মধ্যে হয়ে থাকে। আর অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররা মাসে ৪০,০০০ – ১,৫০,০০০+ টাকা আয় করে থাকেন। তবে এটি নির্দিষ্ট নয়। কাজের ধরন, এক্সপেরিয়েন্স, কাজের কোয়ালিটি এবং মার্কেট ডিমান্ড এর উপর নির্ভর করে।
একজন ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডেভেলপার মাসে কত টাকা আয় করতে পারেন?
শুরুর স্তরে ওয়েব ডেভেলপাররা ২০,০০০ – ৫০,০০০ টাকা/মাসে আয় করে থাকেন। অভিজ্ঞ ফুলস্ট্যাক ডেভেলপাররা ৬০,০০০ – ২,৫০,০০০ টাকা বা তারও বেশি আয় করতে পারেন। তবে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ডিপেন্ড করে ইনকাম কমবেশি হতে পারে।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য কোন কোন দক্ষতাগুলোর চাহিদা বেশি রয়েছে?
ওয়েব/সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, বিজনেস কনসালটিং, ভিডিও এডিটিং/প্রোডাকশন, অনলাইন টিউটরিং ইত্যাদি স্কিলগুলোর মার্কেট ডিমান্ড অনেক বেশি রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সারদের কিভাবে আয় বাড়ানো সম্ভব?
দক্ষতা বৃদ্ধি, মানসম্মত কাজ, নেটওয়ার্কিং, ব্র্যান্ডিং, নতুন চাহিদাসম্মত দক্ষতা অর্জন এবং সময় সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় বাড়ানো সম্ভব।
ফ্রিল্যান্সিং আয় তোলার সেরা উপায়গুলো কী কী?
অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে (পেপাল, পেওনিয়ার), ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট কোম্পানি এবং লোকাল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিল্যান্সিং আয় তোলার সুবিধাজনক পদ্ধতি।
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে কি কি দরকার?
কম্পিউটার/ল্যাপটপ, সফটওয়্যার/টুলস, ইন্টারনেট সংযোগ এবং প্রশিক্ষণ/কোর্স ইত্যাদির দরকার হতে পারে। তবে ফ্রি রিসোর্স ব্যবহার করলে প্রাথমিক খরচ কম লাগবে।
ফ্রিল্যান্সিং কি স্থায়ী আয়ের উৎস?
নিয়মিত মানসম্মত কাজ করে, নতুন প্রযুক্তির সাথে নিজেকে আপগ্রেড করে, নিয়মিত দক্ষতা অর্জনের দিকে গুরুত্ব আরোপ করে এবং ক্লায়েন্টের সাথে সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করলে ফ্রিল্যান্সিং স্থায়ী আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করবে।
উপসংহার
ফ্রিল্যান্সিং থেকে কত টাকা ইনকাম করা যায় কিংবা একজন ফ্রিল্যান্সার কত টাকা আয় করেন এটা সম্পূর্ণ ডিপেন্ড করে কতগুলো বিষয়ের উপর যা আমরা উপরে আলোচনা করেছি।
তবে একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার মাসে ১০০০০ থেকে ৫০০০০ টাকার কাছাকাছি ইনকাম করে থাকে। অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররা মাসে ৪০,০০০ – ১,৫০,০০০+ টাকা আয় করে থাকেন। এটি শুধুমাত্র একটি আনুমানিক ধারণা।
বাস্তব ক্ষেত্রে এর অনেক কম বেশি হয়ে থাকে। যার স্কিল যত ভালো, কাজ করার অভিজ্ঞতা যত ভালো এবং কাজের কোয়ালিটি যত ভালো তার ইনকাম তত বেশি।
আশা করি আজকের এই আর্টিকেলে আপনারা একজন ফ্রিল্যান্সারের মাসিক আয় কত সেই সম্পর্কে একটি আনুমানিক ধারণা পেয়েছেন।
এছাড়াও আপনারা যদি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের অন্যান্য ব্লগ গুলো করতে পারেন।
আমরা ইতিমধ্যে ফ্রিল্যান্সিং কি ও কিভাবে শুরু করতে হয় থেকে শুরু করে ফ্রিল্যান্সিং এ বাংলাদেশের অবস্থান, ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা এবং সবথেকে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। যা আপনি চাইলে পড়ে নিতে পারেন।
তো আজকের এই আর্টিকেল এই পর্যন্তই সবাইকে আসসালামু আলাইকুম।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.